(৬৬)


(৬৬)
মহাভারতে কর্ণের রথের চাকা যখন ডুবে যাচ্ছিল তখন কর্ণ কি করছিল? কেন চাকা তুলছিল! কেন সারথিটা কি করছিল? কি আর করবে বিড়ি খেতে খেতে চিন্তা করছিল, “একটু জল পাই কোথায় বলুন তো?” (সত্যিই এটা ভাবার কথা, সকাল ৬টা থেকে বিকেল পাঁচটা অবধি যুদ্ধ করার সময় কি প্রাত্যহিক কার্যের কোন ব্যবস্থা থাকতো- নাকি সেই ল্যাজে গোবরে অবস্থা? সে যাকগে যা গেছে তা যাক। এখন যদি চাকা ডুবে যায় তাহলে কি করণীয়? কি আর করণীয় ইঁদুরের মতো ডুবন্ত জাহাজ থেকে সবার আগে ভাগুন (যেমন অমিতাভ কালাপাত্থরে ভেগেছিল)! আর কোন ভাবে যদি জাহাজ বেঁচে যায় তাহলে দোমড়ানো মোচড়ানো প্রথম শ্রেণীর টিকিটটি নিয়েই জাঁকিয়ে চেপে বসুন জাহাজে। কারণ এটা আপনার নাগরিক অধিকার।

সেই আর কি! একটি অফিসিয়াল মিটিং-এর জন্য দিল্লীর কে জি মার্গে অবস্থিত এক গেস্ট হাউসে গিয়ে পার্কিং-এর জায়গা খুঁজতে গেলাম। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে আয়নায় নিজেকেই দেখা যায় না তো পার্কিং। দারোয়ান এগিয়ে এলোঃ
-সাব ইঁহা ঘুমাকে অন্দর লাগা দিজিয়ে।
-ইঁহা? ইঁহা তো পানি হ্যায়। গড়বড় তো নেহি হোগা?
– কুছ নেহি সাব দেখো না ম্যায় খাড়া হো সকতা হুঁ!

অতঃপর গাড়ি পার্কিং-এর চেষ্টা এবং কর্ণের দশা। এদিকে মিটিং আর ১০ মিনিট পরেই শুরু হবে। গার্ড এসে অভয় দিল
-কুছ নেহি সাব ম্যায় পাত্থর রাখ দে রাহা হুঁ আপ ব্যাক করলো!

তথৈবচ… এবং গাড়ির সেরেব্রাল ডিস্যানিটাইজেশন (বর্জ্য মাথায় উঠে যাওয়া আর কি!)! এদিকে মিটিং শুরু হয়ে গেছে ঘন ঘন ফোন আসছে! আর আমিও বলছি
– I’m in the parking lot, caught up in the car and trying to extract the car as well as me from it!

যাই হোক ততক্ষণে উপস্থিত ড্রাইভাররা ভিড় করে এসে গেছে এবং কাজে লেগে পড়েছে। এদিক ওদিক থেকে ইঁট পড়ছে (চাকার নীচের দিকে, ঠিক নীচে রাখা যাচ্ছে না কারণ তা বিষুব রেখা পর্যন্ত কাদার তলায়)! ক্ল্যাম্প রেঞ্চ কত কি বেরোল। আমি বুঝলাম এ সরকারি ফাইলের মতন অবস্থা! এক মাঘে শীত যাবে না… তাই বেরোবার মনস্থ করলাম!

দরজা খুলে দেখলাম যে বেশ লাফানোর মত দূরত্বে একটা খোলা ম্যানহোল রয়েছে এবং তার ধারটা তখনো ডোবে নি। দুদিন পরেই ভারত অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলবে ক্যাঙ্গারুদের সঙ্গে। অতএব যস্মিন দেশে যদাচার এক লাফে ম্যানহোলের ধার! ভারসাম্য রেখে দাঁড়িয়ে আবার এক লাফে গিয়ে ধরলাম রেলিং! তারপর পাশাপাশি বেয়ে বেয়ে আসতে শুরু করলাম ঠিক যে ভাবে হলিউডের সিনেমায় এ পোড়ার জীবন রাখতে না চাওয়া হাড় হাভাতেগুলোকে বাঁচাতে যাওয়া পুলিস অফিসারগুলো হাঁটে (মনে আছে? সেই “ওগো আমার পুলিশ… এবং ইত্যাদি”?)।

অবশেষে মেনল্যান্ডে ফিরে এসে কোন রকমে মিটিং কক্ষে ঢুকলাম চাঁদের কলঙ্ক নিয়ে। সবাই প্রেজেন্টেশন দেখবে নাকি আমায় তাই ভেবে পাচ্ছিল না বটে তা আমি বিশেষ পাত্তা দিলাম না! মন দিয়ে নোট টুকতে শুরু করলাম। তবে থেকে থেকে বাহনের কাছে ফিরে যাওয়া তো ছিলই… সেদিকে অবশ্য হেবি সার্কাস! পাঁচটা নাগাদ দেখি ইয়াব্বর একটা বাঁশ সঙ্গে খান পাঁচেক দশাসই টালি এবং আরও জনা পনেরো লোক এসে হাজির। আমি কি জানি কি ভেবে ওদিকে মাড়ালাম না! যা হবে দেখা যায়গা! চিন্তা করে কে আর কবে বড়লোক হতে পেরেছে!

অবশেষে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আমার চলভাষযন্ত্রে কম্পনবার্তা এসে পৌছলো- সোনার তরী ভিড়েছে ডাঙার গায়ে! ছটা নাগাদ বেরিয়ে এসে দেখি সারা সপ্তাহে নিয়মিত স্নান করিয়ে গা মুছিয়ে আমি যা করে উঠতে পারি না, মাড বাথ থেকে বেরিয়ে গাড়িটির সেই দশা হয়েছে। চকচকে মুখ চোখ নিয়ে মিটি মিটি আমার দিকে চুপচাপ দেখছে সে। বৃষ্টি তো কখন সেই থেমেই গেছে।

দ্বিতীয় ঘটনাঃ
মাঃ আমি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছি।
ছেলে (সবে ভারতের ইতিহাস পড়তে শুরু করেছে): মা তোমার বয়স কত?

তৃতীয় ঘটনাঃ
একটি টেলিফোনিক বার্তালাপঃ
কমতিঃ হাআআআআই!
খমতিঃ …………… (এগুলো আসলে লেখার কোন মানে হয় না… বাবারা কল্পনা করে নিন আর মায়েরা নিজের অভিজ্ঞতাটুকু ঝালিয়ে নিন! আর আমরা বরং এট্টু লাফ দিয়ে চলে যাই আকর্ষক জায়গাগুলিতে।)
কমতিঃ কতদিন আছিস?
খমতিঃ তুই কিন্তু আমাকে আট টাকা দিবি?
কমতিঃ কেন? আট কেন? সাত নয়?
খমতিঃ তুই নয় ধোপা? দিবি না মানে? তোর …… দেবে। আরে তোকে নয় ধোপাটা এসেছে হিসাবের গণ্ডগোল করে।
কমতিঃ (নীরবতা পালনই শ্রেয়)
——— (আরও একটু গড়াবার পর)
কমতিঃ কি রে বললি না তো ক দিন থাকবি?
খমতিঃ আর কদিন! শা… …লের মশাগুলো থাকতে দেবে? বা…(এটা চার অক্ষর বোধহয়, গুনে দেখার হিম্মত নেই!)
কমতিঃ (মনে মনে) হেই লোকনাথ দাদু… তুমি কিন্তু কিচ্ছুটি শোনো নি…!
আরও কিছুদূর এবং এডাল সেডাল থেকে লাফালাফির পর শেষ পর্বে!
কমতিঃ কবে দেখা করবি?
খমতিঃ তুই পটি করেছিস? যা এক্ষুণি!
কমতিঃ তুই কর! তুই হিসেব করে কর! তুই ইয়ে করে(পড়ুন মেপে মেপে) কর! তুই ডাইরিতে লিখে রেখে কর! আমার কোন ইয়ের অসুবিধা নেই! এবারে দেখা হলে তোকে… তোকে… তোকে ইয়ে করে দেব!! (এর বেশী কিছু বললে তোকে কুকুর বলে গাল দেব- সেটা আর বলা যায় নি!)
আরও একটি কথোপপতনঃ (ঠিকই পড়েছেন!)

আমিঃ তোকে আমার বেশ কিছু বলার আছে!
খমতিঃ কি বলবি বে? ……এর … কোথাকার! শাল… তোকেও আমার অনেক কিছু গালাগাল দেবার আছে। পটি করেছিস? করে হাত ধুয়েছিস?
এই কথার পর পতন ও মূর্চ্ছা ছাড়া করণীয় কিছু থাকে না। ওপার হতে ডাক ভেসে আসে, “এই তুই না, তুই না………”। কে শোনে কার মূর্ছনা! হা হতোস্মি!

3 thoughts on “(৬৬)

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান